
খুব ভোরে মুঠোফোন বাজে! ম্রোদের ফোন। বিরক্তিকর বটে। কিন্তু উপায় নেই। ধরতে হবে। তাঁরা ঘুম থেকে উঠেন কাক ডাকা ভোরে। তখন শহুরে মানুষের সাউন্ড স্লীপ। ম্রো কার্বারী লংকম ম্রো বললেন লামা রাবার কোম্পানি লিমিটেডের ৬০-৭০ লোক তাঁর মেরত্যা নতুন ম্রোপাড়া জমি দখল করতে এসেছে।
পাড়াবাসী প্রতিহত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দাঙ্গা হলে হোক। যে কোনো উপায়ে ঠেকাতে হবে। বাঁচা মরা প্রশ্ন। জায়গা হারালে এমনিতে মারা যাবো। জায়গা রক্ষার জন্য মরতে হয় মরবো। কথাগুলো এক ঝঁটকায় উর্ধশ্বাসে বলে ফেললেন কার্বারী। তিনি আমার সহযোগীতা চান। আমি ভোরে আধোঘুম, আধো জাগা অবস্থায় কেঁদে বাঁচি অবস্থা। ঢাল তলোয়ারহীন আমি কী সহযোগীতা দেবো!! তারপরও বললাম, আমার কাছে যে কথাগুলো বললেন সেগুলো পার্শ্ববর্তি কেজুপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্র, ও লুলাইংমুখ আর্মি ক্যাম্পে বলেন।তাঁরা সহযোগীতা করবেন। তারপর ইউএনও ও ওসিকে অবহিত করেন। কারণ দাঙ্গাদাঙ্গি হলে সমস্যা। সম্ভবত সেভাবে জানিয়েছেন। কার্বারী লংকম দুপুরে জানালেন তাদের বাধা পেয়ে কোম্পানির লোকজন চলে গেছে। তিনি লুলাইংমুখ ক্যাম্পে ফোন করে না পেয়ে সরাসরি গিয়েছিলেন।
সকালে সাড়ে ১০ টায়ও ক্যাম্প কমান্ডার ঘুমাচ্ছিলেন তাঁকে জানানো হয়েছে। তবে ইউএনও সহযোগীতায় করেছেন। মেরত্যা নতুন ম্রোপাড়ার জায়গাটি নিয়ে কয়েক বছর ধরে লামা রাবার কোম্পানি দখল করার চেষ্টা করছে। কোম্পানির দাবি তাদের ইজারা জায়গা। ১৯৯৫ সালে তাঁরা ১,৬০০ একর জমি রাবার বাগান করার ইজারা নিয়েছে। ম্রোদের দাবি জায়গাটিতে বংশপরম্পরায় তাঁরা জুমচাষ ও বাগান করে আসছেন। কোম্পানি ইজারা নিয়েছে দাবি করলেও ইজারাচুক্তির শর্ত বহু আগে তামাদি হয়েছে। ইজারা নেওয়ার ১০ বছরের মধ্যে বাগান না করলে, রাবার বাগানের জন্য নেওয়া ইজারা জমিতে অন্য বাগান করলে ইজারাচুক্তি বাতিল গণ্য হবে।
সর্বশেষ অবস্থা হচ্ছে, ম্রোদের আবেদনে বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসককে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেছেন। জেলা প্রশাসক লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তে নিয়োজিত করেছেন।এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। ইউএনও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত উভয়পক্ষকে জায়গাটিতে কাজ না করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সেই আদেশ ভঙ্গ করে ১২ জুন একবার কোম্পানি জমিটি দখল করতে যায়। তারপর আজ বৃহস্পতিবার আবার দখল করতে গেলো ম্রো ও ত্রিপুরারা বাধা দিলে দাঙ্গার উপক্রম হয়েছে।জায়গাটি ১০০ একরের মতো হতে পারে। আগেও কয়েকবার আমি নিজেও লামার রাবার কোম্পানির ও মেরিডিয়ান কোম্পানির এমডি কামাল উদ্দিনের সঙ্গে আলাপ করেছি। মেরিডিয়ানের ৩,০০০ একর, লামা রাবারের ১,৬০০ একর জমি রয়েছে।নীরিহ ম্রোদের ১০০ একর জমি নিয়ে কোনো কিছু না করে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কতবার হাতেপায়ে ধরেছি কামাল উদ্দিনকে।বলেছি আপনার ব্যবসা করতে এসেছেন। ১০০ একর জায়গা ছেড়ে দিলেও আপনাদের ব্যবসা হবে। কিন্তু ম্রোদের জায়গাটি বেঁচে থাকার জন্য দরকার। কিন্তু কামাল উদ্দিন নির্বিকার। তাঁকে মানবিকতাবোধে তাড়িত করে না!ম্রোরা জমির সমস্যায় এ বছর জুমচাষও করতে পারেনি।আর জমিটি না পেলে ম্রো ও ত্রিপুরারা উচ্ছেদ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
তাহলে ম্রো ও ত্রিপুরাদের রক্ষা করবে কে ?