
করোনা ভাইরাসের মহামারীতে পুরো পৃথিবী একপ্রকার থমকে যাওয়ার মুহুর্তে বিএমএসসি’র প্রতিষ্ঠা দিবস ২৪শে অক্টোবর এসেছে। এজন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী, এনজিও কর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকসহ যাঁরা সামনের কাতারে করোনা ভাইরাসকে মোকাবেলা করেছেন এবং প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে বিএমএসসি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছে। এবং বিএমএসসি’র সংগঠক ও কর্মীসহ যাঁরা এখনও সমুখযুদ্ধে আছেন, তাঁদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছে।
৩০ বছর আগে ১৯৮৯ সালে ২৪ শে অক্টোবর ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগের নিমিত্তে এক ঝাঁক প্রাণোচ্ছল শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস্ কাউন্সিল(বিএমএসসি) নামে একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যোগাযোগের জন্য বিএমএসসি প্রতিষ্ঠা করা হলে পরবর্তীকালে মারমা ছাত্র নেতারা মারমা জাতির পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ হিসেবে শিক্ষাকে চিহ্নিত করে শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে কতগুলো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করে আসছে।
শিক্ষা,সাম্য,মৈত্রী ও প্রগতি এ চারটি মূলনীতিকে সামনে রেখে বিভিন্ন সময়ে উত্থান-পতন ও বন্ধুর পথে বিএমএসসি ৩১টি বছর পার করে আজকেই ৩২ বছরে পদার্পণ করতে চলেছে। এ ৩০টি বছরে বিএমএসসি তার কার্যক্রমে অনেক মেধাবী ও সংগঠক একদিকে যেমন পেয়েছে, এতে সংগঠন জ্ঞানে,কর্মে,চিন্তায় পরিপুষ্ট হয়েছে অন্যদিকে অনেক নিঃস্বার্থ সংগঠকদের মেয়াদপূর্ণ হেতু বিদায় দিয়েছে।বিএমএসসি’র এ যাবতকালে জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে বিএমএসসি’র সাবেক সংগঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীসহ যারা পাশে থেকেছেন, তাঁদের সবাইকে বিএমএসসি বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
একটা সংগঠন ৩১টি বছর পার করে এসেছে। এ ৩১টি বছরে অনেক অর্জন যেমন হয়েছে,তেমনি অনেক ব্যর্থতাও রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে মারমা সমাজের খারাপ, কুসংস্কার ও পশ্চাদপথ দিকগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করছে। শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাবোধ তৈরী করেছে। এজন্য লাইব্রেরী স্থাপন,হোস্টেল স্থাপনসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে ফ্রি-কোচিং কার্যক্রমের আওতায় বিনামূল্যে পড়িয়েছে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্বুদ্ধকরণের জন্য সবরকমের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। মাতৃভাষা শিক্ষা কোর্সটি চালু রেখেছে। ত্রাণ সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। বর্তমান এ কমিটির মেয়াদে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হওয়ার ফলে কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসায় খুব বেশি কাজ করতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু এ সময়কালে এ কমিটি ঝুঁকির মুখে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় কাজ করছে। অসহায় ও গরীব-দুঃস্থদের তালিকা করা থেকে শুরু করে লিফলেট বিতরণ, সচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ ত্রাণ বিতরণ পর্যন্ত বিএমএসসি কাজ করেছে। এবং ত্রাণ সহায়তা ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে।
বর্তমান সময়ে আদিবাসীদের উপর নিপীড়ন শুধুই রাজনৈতিক নয়, একই সাথে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনও নতুন মাত্রা হিসেবে যোগ করেছে। তাই তো আমরা দেখি, বিভিন্ন জায়গার নাম পরিবর্তন করে বাংলা শব্দ বসানো হচ্ছে। আদিবাসী মেয়েকে ছলে-বলে কৌশলে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একদিকে নিজস্ব মাতৃভাষা শিক্ষার আয়োজনও তেমন দৃশ্যমান হয়নি অন্যদিকে আদিবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে ভিন্নভাবে ক্ষুদ্র অর্থে উত্থাপন করা হচ্ছে।
তাই তো সাম্প্রতিককালে দেখি, তেছেইঃ(থানচি) তে আকাশ থেকে অন্য কোন ধর্মের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে বলে বিভিন্ন ভূয়া নিউজ ছড়ানো হচ্ছে, যা আবারও ধর্মান্তরকরণ, উচ্ছেদকরণ বা জায়গা নামের বদল ঘটিয়ে অন্য কোন উগ্র ধর্মের নামে পরিচিতকরণের সম্ভাবনাতেই ওই এলাকার আদিবাসীরা আশঙ্কিত ও আতঙ্কিত, এরকম গর্হিত কাজের প্রতিবাদের বিএমএসসি সোচ্চার আছে। ঐতিহাসিক কাল থেকে বংশ পরম্পরায় লালন ও পালন করে আসা নিজস্ব সংস্কৃতির উপাদানগুলো চর্চা করা না হলে অচিরেই হারিয়ে যাবে, এ বোধ থেকেই বিএমএসসি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে জাতির সুষ্ঠু বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।এ মহাদুঃসময়ে করোনাকে ছাপিয়ে ধর্ষণের মহামারী চলছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র এর রিপোর্ট মতে, গত আট মাসে প্রায় ৯০০ টি ধর্ষণের মতো জঘন্যতম ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা দেশের সকল বিবেকবাণ মানুষকে নাড়া দিয়ে চলেছে। এরকম নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিএমএসসি রাজপথে আন্দোলনে থেকেছে। বিএমএসসি নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সম্মিলিত আন্দোলনে শক্তি জুগিয়ে চলেছে এবং প্রয়োজনে অনেক সময় আন্দোলনে সর্বাগ্রে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এ দীর্ঘ পথচলার সময়ে যাঁরা আর্থিক ও মানসিকভাবে সাহস জুগিয়ে চলেছেন, সবসময় পাশে থেকে বন্ধুর পথকে মসৃণ করেছেন, সেই সকল সাবেক সংগঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের আবারও বিএমএসসি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। একই সাথে ভবিষ্যতেও আপনাদের সবার অকৃত্রিম ও অকৃপণ সহযোগিতা পাবে বলে বিএমএসসি আরও সামনে এগিয়ে যাবার আশায় বুক বাঁধছে।