মহাকবি শেক্সপিয়ারকে কালজয়ী কবি বলা হয়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তিনি ‘কাল’কে জয় করতে পারেননি। তাঁকে এখন কবর থেকে টেনে তুলে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, কেন তিনি ‘রোমিও ও জুলিয়েট’ নাটকের দ্বিতীয় অংকে জুলিয়েটের মুখ দিয়ে What is in a name ? (‘নামে কী আছে বা আসে যায়’) কথাটি বলিয়েছিলেন? কিন্তু এখনতো দেখি নামে অনেক কিছু আসে যায়। ‘‘ঞ্যোহ্লা মং” নামটিকে এখন বাংলাদেশের মাটি ধারন করতে পারছেনা। নামটিকে নিয়ে অনেকেই কটুক্তি করতেও ছাড়ছেন না। কী বিচিত্র এ দেশ সেলুকাস! ‘‘আহ্লাদ” কিংবা ‘‘প্রহ্লাদ”-এর ‘‘হ্লা” উচ্চারণে কোন সমস্যা নেই, অথবা ‘‘মিঞা সাহেব”-এর ‘‘ঞা” উচ্চারণে কষ্ট নেই। যত কষ্ট হয় ‘‘ঞ্যো” আর ‘‘হ্লা”-এর উচ্চারণে। আসলে এগুলোর কোনটাতেই সমস্যা নেই। সমস্যা আছে তাদের, এসব নিয়ে যারা অহেতুক ঝড় তুলছে তাদের বর্ণবাদী চরিত্রে ও চিন্তায়। তাদের অসহিষ্ণু মানসিকতায়। বাংলার কবি, সাহিত্যিক ও রাজনীতিকরাতো ‘‘হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ” বা ‘‘আবহমান বাংলার অসাম্প্রদায়িকতা” কথা গুলো বলতে পেরে নিজেদেরকে ধন্য মনে করেন। রাষ্ট্রের সংবিধানও পরম মমতায় ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে বৈষম্য না করার [অনুচ্ছেদ ২৮(১)] অঙ্গিকারের কথা নিজের বুকে ধারন করে নিয়েছে। সেই বাংলাদেশে এক শ্রেণির মানুষ ভিন্ন কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি অসহিষ্ণু হয়ে যেভাবে বর্ণবাদী আচরণ করছেন সেটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। তাদের এ অসহিষ্ণুতা মুক্তিযুদ্ধের ‘‘সামাজিক সাম্যের” (সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্যারা-৩) চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এভাবে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ও বহুত্ববাদী চরিত্রের গায়ে কালিমা লেপন করা কি শোভা পায়?-
মংসানু চৌধুরী, অধিকার ও উন্নয়ন কর্মী ।